উচ্চ মাধ্যমিক এইচএসসি জীববিজ্ঞান উদ্ভিদবিজ্ঞান : কোষ গঠন ও কাজ

কোষ: গঠন ও কাজ

প্রারম্ভিক আলোচনা: এই অধ্যায়টি নৈব্যাক্তিক অংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু জিনিস ভালো মত বুঝে নিলে তেমন কনফিউশন হবার কথা না। যত্ন সহকারে এই অধ্যায়টি পড়া বাঞ্ছনীয়। প্রাণিবিজ্ঞান বই-এর কোষ অধ্যায়টি এখানে সমন্বিত।

অধ্যায সারবস্তু:

১. কোষপ্রাচীর সেলুলোজ নির্মিত।

২. বিজ্ঞানী হাক্সলি প্রোটোপ্লাজমকে “জীবনের ভৌত ভিত্তি” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

৩. প্লাজমা মেমব্রেন দ্বিস্তরী ফসফোলিপিড দিয়ে গঠিত। ফসফোলিপিডের মাথার অংশ পানিগ্রাহী (hydrophilic) আর লেজের অংশ পানিবিদ্বেষী (hydrophobic)। (philic মানে আকর্ষী আর phobia মানে ভয়)

৪. প্লাজমা মেমব্রেনে ফসফোলিপিড অণু সবসময় সচল থাকে। (বই-এর ছবিতে যদিও খুব স্থির মনে হয়) তাই তরল পদার্থের মত মনে হয়। আর প্রোটিনগুলো ওই তরল পদার্থে ভাসমান মোজাইকের মত। এজন্যই মডেলটির নাম “ফ্লুইড-মোজাইক মডেল”। এটি প্রবর্তন করেন সিঙ্গার এবং নিকলসন।

৫. সাইটোপ্লাজমের ম্যাট্রিক্স কে বলা হয় হায়ালোপ্লাজম। উদ্ভিদের সাইটোপ্লাজমে বৃহৎ কোষ গহবর থাকে।

§ কোষ গহ্বরকে বেষ্টনকারী পদার্থকে বলা হয় – টনোপ্লাস্ট।

সাইটোপ্লাজমের বিভিন্ন অঙ্গাণু:

৬. প্লাস্টিড: (প্লাস্টার থেকে এই প্লাস্টিড নামটা এসেছে)

· লিউকোপ্লাস্ট বর্ণহীন (লিউকো=বর্ণহীন), এরা আলো পেলে ক্লোরোপ্লাস্ট বা ক্রোমোপ্লাস্ট-এ পরিণত হতে পারে।

· সঞ্চিত খাদ্য অনুসারে লিউকোপ্লাস্টিডের প্রকারভেদ:

o অ্যামাইলোপ্লাস্ট = শর্করা

o অ্যালিউরোপ্লাস্ট = আমিষ / প্রোটিন (একে প্রোটিনোপ্লাস্ট-ও বলা হয়)

o এলায়োপ্লাস্ট = চর্বি / তেল

· ক্রোমোপ্লাস্ট বলা হয় সবুজ ছাড়া অন্য যে কোন রঙের প্লাস্টিডকে। (ক্রোম = রঙ, যেমন ক্রোমোজোম), ফুলে, ফলে এই ক্রোমোপ্লাস্ট থাকে।

· ক্লোরোপ্লাস্ট সবুজ বর্ণ সৃষ্টিকারী, এখানে ক্লোরোফিল a এবং b এর সাথে ক্যারোটিন ও জ্যান্থোফিল-ও থাকে। কিন্তু ক্লোরোফিল বেশি থাকার জন্য সবুজ দেখায়।

· ক্লোরোপ্লাস্ট-এর ম্যাট্রিক্স কে স্ট্রোমা বলা হয়।

· গ্রানাম চাকতির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনকারী নালিকা “স্ট্রোমা ল্যামেলী” (গ্রানাম ল্যামিলা নয় কিন্তু!!)।

· ক্লোরোপ্লাস্টেও কিছু ATP তৈরি হয়, (শুধুমাত্র মাইটোকন্ড্রিয়াতেই না।)

· সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ক্লোরোপ্লাস্টে ঘটে।

৭. মাইটোকন্ড্রিয়া: কোষের পাওয়ার হাউস

· উদ্ভিদের প্রতি কোষে ২০০-৪০০ টি মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে।

· বহিঃঝিল্লী সমান্তরাল ও মসৃণ, অন্তঃঝিল্লী ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে ক্রিস্টি সৃষ্টি করে। ক্রিস্টিতে ATP সিন্থেসিস হয়।

· ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন পরিবহন, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন ইত্যাদি মাইটোকন্ড্রিয়ার অভ্যন্তরে সম্পন্ন করে।

· কিছু পরিমাণ DNA, RNA তৈরি করতে পারে। (মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টের নিজস্ব DNA আছে)

৮. গলগি বডি: (রপ্তানীকারক অঙ্গাণু)

· এদের প্রধান কাজ হরমোন সহ বিভিন্ন বিপাকীয় দ্রব্য ক্ষরণ করা। প্রাণিদেহে হরমোন অনেক বেশি ব্যবহৃত, তাই প্রাণিকোষে গলগি বডি বেশি, উদ্ভিদ কোষে কম।

· এরা লাইসোসোম তৈরি করে, যেটি হচ্ছে কোষের রিসাইকল সেন্টার।

· মাইটোকন্ড্রিয়ায় ATP সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় সব এনজাইম থাকে না। কিছু এনজাইম গলগি বডি থেকে যায় (নিঃসৃত হয়)।

৯. রাইবোসোম: প্রোটিন তৈরির কারখানা

· ৫০% RNA এবং ৫০% হিস্টোন জাতীয় আমিষ

· রাইবোসোম মূলত দু’প্রকার, 70S এবং 80S. প্রোক্যারিওট কোষের রাইবোজোম 70S এবং ইউক্যারিওট কোষের রাইবোজোম 80S।

· 60S + 40S = 80S & 50S + 30S = 70S (গাণিতিকভাবে সাবইউনিট গুলোর S-এর মান যোগ করা হয় না, দু’টো আলাদা সাবইউনিট মিলে যে রাইবোজোম গঠিত, এর S এর মান যোগফলের চেয়ে একটু কম হয়)

· রাইবোসোমের প্রধান কাজ প্রোটিন তৈরি করা।

১০. এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম:

· দু’প্রকার, মসৃণ ও অমসৃণ। অমসৃণ -এর গায়ে রাইবোজোম থাকে।

· অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে প্রোটিন তৈরি হয় (যেহেতু সেখানে রাইবোজোম থাকে), আর মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে লিপিড তৈরি হয়।

· সিস্টারনি, ভেসিকল, টিউবিউল ইত্যাদি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের অংশ। এগুলো গলগি বডিতেও থাকে।

১১. লাইসোসোম: (কোষের রিসাইকেল সেন্টার)

· অন্তঃকোষীয় পরিপাকের মুখ্য উপাদান, অর্থাৎ কোষের ভিতরের বিভিন্ন বস্তু লাইসোজোম পরিপাক করে, যেমন অনুপ্রবেশ করা জীবাণু, বা খাদ্য উপাদান, নিজের অঙ্গাণু ধ্বংস করে।

· লাইসিস করে বলে “লাইসোসোম” নাম দেওয়া।

· উদ্ভিদকোষে তেমন দেখা যায় না।

(অন্তঃকোষীয় না আন্তঃকোষীয়, এ নিয়ে একটা সমস্যা সবসময়েই থেকে যেতে পারে, একটা উদাহরণ মনে রাখা যেতে পারে, আন্তঃবিভাগ প্রতিযোগিতা মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে যত বিভাগ রয়েছে, সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা, আর অন্তঃবিভাগ বলতে শুধুমাত্র একটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা। আন্তঃ বলতে নিজের টাইপের মধ্যে কিন্তু বাইরের সাথে, অন্তঃ বলতে নিজের মধ্যেই)

১২. মাইক্রোটিউবিউল্‌স: (কোষের কঙ্কাল)

· কোষ বিভাজন-এর সময় যে স্পিন্ডল ফাইবার গঠিত হয়, তা মাইক্রোটিউবিউলস দিয়ে তৈরি।

· সিলিয়া ও ফ্লাজেলায় মাইক্রোটিউবিউলস থাকে।

· কোষ-কঙ্কাল রূপে সাইটোপ্লাজমকে দৃঢ়তা প্রদান করে।

১৩. সেন্ট্রিওল: (কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রক)

· কোষ বিভাজনে স্পিন্ডল ফাইবার বা মাকুতন্ত্র গঠনে ভূমিকা রাখে ও ক্রোমোজোমের প্রান্তীয় গমনে সহায়তা করে।

১৪. নিউক্লিয়াস: (কোষের মস্তিষ্ক)

· নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের বহিঃস্তরে অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে, যাকে নিউক্লিয়ার রন্ধ্র বলা হয়।

· একটি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিউক্লিওলাস সংযুক্ত থাকে, ওই স্থানটিকে বলা হয় SAT বা স্যাটেলাইট।

· নিউক্লিওলাস নিউক্লিক এসিডের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে।

· ক্রোমোসোমে জিন থাকে, যেটি বংশগতির ধারক ও বাহক।

১৫. বিভিন্ন আবিষ্কারের সন ও আবিষ্কারক:

অঙ্গাণু আবিষ্কারক আবিষ্কারের সন
কোষ প্রাচীর রবার্ট হুক ১৬৬৫
কোষ ঝিল্লী ন্যাগেলী ১৮৮৫
প্লাস্টিড শিম্পার ১৮৮৩
মাইটোকন্ড্রিয়া অপ্টম্যান ১৮৯৪ / ১৮৯৫
গলগি বডি গলগি ১৮৯৮
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম পোর্টার ১৯৪৫
রাইবোসোম প্যালাডে ১৯৫৫
লাইসোসোম দ্য দুবে ১৯৫৫
নিউক্লিয়াস রবার্ট ব্রাউন ১৮৩১
সেন্ট্রিওল ভ্যান বেনডেন

বোভেরী

১৮৮৭

১৮৮৮

মাইক্রোটিউবিউলস রবার্ট এবং ফ্রান্‌চি ১৯৫৩
ক্রোমোসোম স্ট্রাসবুর্গার ১৮৭৫

প্রাণিবিজ্ঞান বই-এর কিছু অংশ:

১৬. আদিকোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই, একে প্রোক্যারিওট কোষ বলে। ইউক্যারিওটিক কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে, যাকে প্রকৃত কোষ বলা হয়।

১৭. শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে হ্যাপ্লয়েড সেট থাকে। বাকি সব দেহীয় কোষে ডিপ্লয়েড সেট থাকে।

১৮. কয়েকটি প্রাণিতে ক্রোমোসোম সংখ্যা:

· ড্রসোফিলা = ৮ টি

· ইঁদুর = ৪০ টি

· গরু = ৬০ টি

· কুকুর = ৭৮ টি

· গিনিপিগ ও ঘোড়া = ৬৪ টি

· মানুষ = ৪৬ টি ( ২৩ জোড়া)

১৯. X ও Y ক্রোমোসোমকে “সেক্স ক্রোমোজোম” বলা হয়, অন্য বাকি ২২ জোড়া ক্রোমোজোমকে “অটোজোম” বলা হয়।

২০. কোষে RNA-এর ৮০% হলো রাইবোসোমাল RNA ।

উদ্ভিদবিজ্ঞান সকল অধ্যায় দেখতে এখানে যান

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline